শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৫

সন্তান জন্মের পর করণীয় – নিজে জানুন অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।

সন্তান জন্মের পর করণীয় – নিজে জানুন অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।
সন্তান মহান আল্লাহ পাক উনার দেওয়া নেয়ামতের মধ্যে দামি একটা নিয়ামত আর সন্তান জন্মগ্রহণের সাথে পবিত্র আক্বিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত কারন এটা মুস্তাহাব এবং সুন্নতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এবার আসুন আক্বিকা সম্পর্কে সামান্য ধারনা নেই।
১-সন্তান জন্ম নেবার পর পিতা-মাতার উপর কর্তব্য হল তাকে প্রথমেই ভাল করে গোসল দিবে। প্রথমে লবন পানি দিয়ে তারপর পরিষ্কার এবং পবিত্র পানি দিয়ে, তাহলে ফোড়া, গোটা ইত্যাদি অনেক রোগ থেকে শিশু মুক্ত থাকবে ইনশাআল্লাহ। শরীরে বেশি ময়লা থাকলে কয়েকদিন পর্যন্ত লবন পানি দিয়ে গোসল করাবে, ময়লা বেশি না হলে শুধু পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে গোসল করাবে। যদি বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে গোসল দেয়া আবশ্যক নয়। তবে যৌক্তিক কোন কারণ না থাকলে ময়লাসহ রাখা উচিত নয়। কারণ ময়লা ও নাপাক ব্যক্তির কাছে ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা আসেন না।
২-ভেজা কাপড় দিয়ে শিশুর নাক, কান, গলা, মাথা ভালভাবে পরিস্কার করবে। অপরিচ্ছন্নতা থেকে শিশুর বহু রোগ জন্ম নেয় বলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সবসময় তাই বলেন।
৩-সম্ভব হলে শিশুকে প্রথম দুধ পান করানোর আগে কোন বুযুর্গ ব্যক্তির কাছে নিয়ে সামান্য খেজুর চিবিয়ে শিশুর মুখে দিবে। এটাকেই তাহনীক বলে। এটা করা মুস্তাহাব। যদি বুযুর্গ ব্যক্তি না পাওয়া যায়, তাহলে তুলনামূলক ভাল ও উত্তম ব্যক্তি দিয়ে তাহনীক করানো যাবে। কাউকেই না পেলে নিজেরাই করে নিবে বিসমিল্লাহ বলে।
৪-জন্ম নেবার পর শিশুর ডান কানে পবিত্র আজান ও বাম কানে পবিত্র ইকামত দিবে মৃদু আওয়াজে।
৫-শিশু জন্ম নেবার সাত দিনের মাথায় মাথার চুল ফেলে চুল পরিমাপ করে সে ওজন পরিমাণ স্বর্ণ বা রোপা বা তার মূল্য দান করা এবং সুন্নতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
৬-সন্তান জন্ম নেবার পর সপ্তম দিন ছেলে হলে দু’টি বকরী বা গরু-মহিষের ৭ ভাগের দুই ভাগ, আর মেয়ে হলে একটি বকরী বা গরু-মহীষের ৭ ভাগের একভাগ আক্বিকা হিসেবে জবাই করা এ মুস্তাহাব এবং সুন্নতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আক্বিকার পশুর হাড্ডি ভাঙ্গবে না। আত্বীয় স্বজনকে গোস্ত খাওয়াবে, এবং গরীব দুঃখীদেরও খাওয়াবে। নিজেরাও খাবে। সেই সাথে ছেলেটির সুন্দর নামও রাখাও মুস্তাহাব এবং সুন্নতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐদিনে।
৭ দিনের মাথায় আক্বিকা দিতে না পারলে ১৪ দিনের মাথায়, না হলে ২১ দিনের মাথায় আক্বিকা দিবে। অথবা বালেগ হওয়ার আগে যেকোন সময় জন্মের সাত দিন হিসেব করে সাত দিনের মাথায় আক্বিকা দেয়া উত্তম। জরুরী নয়। কুরবানীর সাথেও আক্বিকা দেয়া যায় তবে আলদা করাই ভালো।
বাচ্চা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেলে আক্বিকার প্রয়োজনীয়তা আর বাকি থাকে না। তাই নাবালেগ থাকা অবস্থায় আক্বিকা দেয়াই সর্বোত্তম। আক্বিকা দেয়া যদিও ফরজ কোন বিষয় নয়, কিন্তু মুস্তাহাব এবং সুন্নতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আক্বিকার দলিল সমূহঃ-
عن حسين قال : قال رسول الله – صلى الله عليه و سلم – : من ولد له فأذن في أذنه اليمنى وأقام في أذنه اليسرى
হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিতঃ নুরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, যার সন্তান হয়, সে যেন তার ডান কানে পবিত্র আজান এবং বাম কানে পবিত্র ইকামত দেয়। {শুয়াবুল ঈমান শরীফ, হাদীস শরীফ নং-৮৬১৯, মুসনাদে আবী ইয়ালা শরীফ, হাদীস শরীফ নং-৬৭৮০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক শরীফ, হাদীস শরীফ নং-৭৯৮৫}
عن أبى موسى قال ولد لى غلام فأتيت به النبى -صلى الله عليه وسلم- فسماه إبراهيم وحنكه بتمرة
হযরত আবু মুসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্নিত তিনি বলেন, আমার একটি ছেলে হলে আমি তাকে নুরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার কাছে নিয়ে এলাম, তখন নুরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি তার নাম রাখেন ইবরাহীম এবং তাকে তাহনীক করান খেজুর দিয়ে। {সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস শরীফ নং-৫৭৩৯, সুনানুল বায়হাকী কুবরা শরীফ, হাদীস শরীফ নং-১৯০৮৮, মুসনাদে আহমাদ শরীফ, হাদীস শরীফ নং-১৯৫৭০, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা শরীফ, হাদীস শরীফ নং-২৩৯৪৮}
عن سمرة بن جندب أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال « كل غلام رهينة بعقيقته تذبح عنه يوم سابعه ويحلق ويسمى
হযরত সামুরা বিন জুনদুব রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নুরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ইরশাদ মোবারক করেছেনঃ-প্রত্যেক বালকের পক্ষ থেকে আক্বিকা হল বন্ধক স্বরূপ, যা তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জবাই করবে, এবং তার মাথা মুন্ডাবে, এবং তার নাম রাখবে। {সুনানে আবু দাউদ শরীফ, হাদীস শরীফ নং-২৮৪০, সুনানে বায়হাকী কুবরা শরীফ, হাদীস শরীফ নং-১৯০৪৭, সুনানে দারেমী শরীফ, হাদীস শরীফ নং-১৯৬৯, মুসনাদে আহমাদ শরীফ, হাদীস শরীফ নং-২০০৮৩}
عَنْ أُمِّ كُرْزٍ الْكَعْبِيَّةِ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ
উম্মে কুরযিল কা’বিয়্যাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন আমি নুরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি যে, ছেলের জন্য দু’টি একইমানের বকরী ও মেয়ের জন্যে একটি বকরী [আক্বিকা দিবে]। {সুনানে আবু দাউদ শরীফ, হাদীস শরীফ নং-২৮৩৬, সুনানে তিরমিযী শরীফ, হাদীস শরীফ নং-১৫১৩, সুনানে দারেমী শরীফ, হাদীস শরীফ নং-১৯৬৬, সহীহ ইবনে হিব্বান শরীফ, হাদীস শরীফ নং-৫৩১৩, মুসনাদে আবী ইয়ালা শরীফ, হাদীস শরীফ নং-৪৬৪৮, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহহুয়া শরীফ, হাদীস শরীফ নং-১২৯০}
عن أم كرز قالت قالت امرأة من أهل عبد الرحمن بن أبي بكر إن ولدت امرأة عبد الرحمن غلاما نحرنا عنه جزورا فقالت عائشة : لا بل السنة عن الغلام شاتان مكافئتان وعن الجارية شاة يطبخ جدولا ولا يكسر لها عظم فيأكل ويطعم ويتصدق يفعل ذلك في اليوم السابع فإن لم يفعل ففي أربع عشرة فإن لم يفعل ففي إحدى وعشرين
হযরত উম্মে কুরজ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আব্দুর রহমান বিন আবী বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনুহু উনার পরিবারের এক মহিলা বলেন, আব্দুর রহমান রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার স্ত্রী ছেলে সন্তান প্রসব করেন, তখন আমরা উনার পক্ষ থেকে একটি ভেড়া জবাই করেছি। তখন হযরত সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন-এমনটি নয়, বরং পদ্ধতি হলো-ছেলের জন্যে দু’টি সমান পর্যায়ের বকরী আর মেয়ের জন্যে একটি বকরী দিবে [আক্বিকা]। তারপর এটিকে রান্না করবে, তবে এর হাড্ডিকে ভাঙ্গবে না। তারপর তা নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে, এবং দান করবে। এই কাজগুলো করবে সপ্তম দিন, সেদিন সক্ষম না হলে চৌদ্দতম দিন, সেদিনও সক্ষম না হলে একুশতম দিন আক্বিকা করবে । [মুসনাদে ইসহাক বিন রাহহুয়া শরীফ, হাদীস শরীফ নং-১২৯২}
عن جعفر بن محمد عن أبيه أنه قال وزنت فاطمة بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شعر حسن وحسين وزينب وأم كلثوم فتصدقت بزنة ذلك فضة
হযরত যাফর বিন মুহাম্মদ উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, উনার পিতা বলেছেনঃ নুরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি হযরত যাহ্‌রা আলাইহাস সালাম, হযরত হাসান আলাইহিস সালাম, হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম, হযরত জয়নব ও উম্মে কুলসুম আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সকলের চুল মোবারক ওজন করে সে পরিমাণ রোপা সদকা করে দিয়েছেন। {মুয়াত্তা মালিক শরীফ, হাদীস শরীফ নং-১৮৩৯, শুয়াবুল ঈমান শরীফ, হাদীস শরীফ নং-৮২৬২, সুনানে বায়হাকী কুবরা শরীফ, হাদীস শরীফ নং-১৯০৭৯}
পরিশেষে একটি কথাই বলবো মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের নেক আওলাদ দান করুন ছেলে হোক বা মেয়ে হোক আমরা যেনো তাদের পবিত্র কোরআন সুন্নাহ উনাদের হুকুম অনুসারে লালন পালন করতে পারি এই তৌফিক দেন এবং আক্বিকা সহ যাবতিও কর্ম সম্পাদনের তৌফিক দেন। আমিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন